শেরম্যান অ্যালেক্সি নেটিভ অ্যামেরিকান কবি ও ঔপন্যাসিক। তার জন্ম ৭ অক্টোবর, ১৯৬৬ সালে ওয়াশিংটনের একটি ইন্ডিয়ান রিজার্ভেশনে। তিনি ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যামেরিকান স্ট্যাডিজে গ্রাজুয়েশন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতার বইগুলি হলো ফেস(২০০৯), ওয়ান স্টিক সং (২০০০), দ্য ম্যান হু লাভস স্যালমন (১৯৯৮), দ্য সামার অব ব্লাক উইন্ডো(১৯৯৫) ইত্যাদি। তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘দ্যা বিজনেস এন্ড ফ্যান্সি ড্যান্সিং’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২সালে। কবিতার পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি উপন্যাস ও গল্পসংকলন প্রকাশ করেছেন। তিনি ওয়াশিংটন স্টেট আর্টস কমিশন এন্ড ন্যাশনাল এন্ডোমেন্ট ফর দ্য আর্টস থেকে কবিতা-ফেলোশিপ এবং লিলা ওয়ালেস-রিডারস ডাইজেস্ট থেকে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড পান। এছাড়া তিনি গ্রান্টা ম্যাগাজিন থেকে স্ট্রেঞ্জার জিনিয়াস অ্যাওয়ার্ড, বোস্টন গ্লোব-হর্ন বুক অ্যাওয়ার্ড, পুশকার্ট পুরস্কার, পেন/মালামুদ পুরস্কার পেয়েছেন তাঁর কাজের স্বীকৃতস্বরূপ।
গ্রেট আমেরিকান-ইন্ডিয়ান উপন্যাস যেভাবে লিখতে হয় সমস্ত ইন্ডিয়ানদের অবশ্যই কতগুলো দুঃখজনক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে: করুণ নাক, করুণ চোখ এবং করুণ বাহু। তাদের হাত এবং আঙ্গুলগুলি দুঃখজনক হতে হবে যখন তারা দুঃখজনক খাবারের দিকে হাত বাড়াবে। নায়ককে অবশ্যই হাফ-ব্রিড, অর্ধেক সাদা এবং অর্ধেক ইন্ডিয়ান হতে হবে, হর্স কালচারের হলে ভালো হয়। তাকে প্রায়ই একা একা কাঁদতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। নায়িকা যদি একজন ইন্ডিয়ান রমণী হন, তবে তিনি সুন্দরী হবেনই। তাকে অবশ্যই ক্ষীণাঙ্গী হতে হবে এবং একজন সাদা পুরুষের প্রেমে পড়তে হবে। কিন্তু, যদি সে একজন ইন্ডিয়ান পুরুষকে ভালোবাসে, তাহলে সেই লোকটিকে অবশ্যই হাফ-ব্রিড হতে হবে, হর্স কালচারের হলে ভালো। ইন্ডিয়ান রমণী যদি একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষকে ভালোবাসে, তাহলে সেই লোকটিকে এতটাই সাদা হতে হবে যে, আমরা দেখতে পাব তার চামড়া দিয়ে নদীর মতো নীল শিরা বয়ে যাচ্ছে। যখন ইন্ডিয়ান রমণী তার পোশাক ছাড়বে, তখন সাদা মানুষটি তার বাদামি ত্বকের অফুরন্ত সৌন্দর্য দেখে রীতিমতো হাঁপাবে। তাকে প্রকৃতির সাথে তুলনা করা উচিত: বাদামি পাহাড়, পর্বত, উর্বর উপত্যকা, শিশিরভেজা ঘাস, বাতাস এবং স্বচ্ছ জল। যদি তাকে ঘোলা জলের সাথে তুলনা করা হয়, তবে তার অবশ্যই একটি গোপনীয়তা থাকতে হবে। ইন্ডিয়ানদের সব সময় কিছু গোপনীয়তা থাকে, যা সাবধানে এবং একটু ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হয়। তবু ঝড়ের মতো হঠাৎ করেই ইন্ডিয়ান-গোপনীয়তা উন্মোচিত হতে পারে। ইন্ডিয়ান পুরুষরা অবশ্যই ঝড়। তারা অবশ্যই ঝড়ের মতো তছনছ করবে তাদের প্রেমে পড়া শ্বেতাঙ্গ নারীর জীবন। সব সাদা নারী ভালোবাসে ইন্ডিয়ান পুরুষদের। সব সময় সেটাই হয়। শ্বেতাঙ্গ মহিলারা নীল জিন্স এবং টি-শার্ট পরা ওই অসভ্যদের ঘৃণা করে প্রকাশ্যে, কিন্তু গোপনে গোপনে তারা লালায়িত। সাদা মহিলারা হর্স কালচারের হাফ-ব্রিড ইন্ডিয়ান পুরুষদের স্বপ্ন দেখে। ইন্ডিয়ান পুরুষরা ঘোড়া, বন্য গন্ধযুক্ত এবং খেলুড়ে। যখন ইন্ডিয়ান পুরুষ তার প্যান্টের বোতাম খুলে ফেলে, শ্বেতাঙ্গ নারীকে অবশ্যই মাটির অবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। একটি হত্যা, একটি আত্মহত্যা, একটি ধর্ষণের চেষ্টা অবশ্যই হবে। অ্যালকোহল পান করা উচিত। গাড়ি অবশ্যই ধুমসে চালাতে হবে। ইন্ডিয়ানদের অবশ্যই একধরণের ভিশন থাকতে হবে। শ্বেতাঙ্গদের একই ভিশন থাকতে পারে যদি তারা ইন্ডিয়ানদের প্রেমে পড়ে। যদি একজন শ্বেতাঙ্গ একজন ইন্ডিয়ানকে ভালোবাসে, তাহলে শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিটি ভালোবাসার খাতিরে ইন্ডিয়ান সেজে বসে থাকবে। সাদা মানুষদেরকে অবশ্যই নিজেদের অস্তিত্বের গভীরে ইন্ডিয়ানকে লালন করতে হবে । সেই ইন্ডিয়ানরা হাফ-ব্রিড এবং স্পষ্টতই হর্স কালচারের হবে। যদি গভীরে লালিত ইন্ডিয়ানটি পুরুষ হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই একজন যোদ্ধা হতে হবে, যেহেতু সে একজন সাদা মানুষের ভিতরে থাকে। আর যদি গভীরে লালিত ইন্ডিয়ানটি নারী হয়, তবে তাকে অবশ্যই একজন নিরাময়কারী হতে হবে, বিশেষ করে যদি সে একজন সাদা মহিলার ভিতরে থাকে । মাঝে মাঝে নানা কিসিমের জটিলতা দেখা দেয়। একজন ইন্ডিয়ান পুরুষ একজন সাদা রমণীর ভিতরে লুকিয়ে থাকতে পারে। এই বিরল পরিস্থিতিতে, প্রত্যেকেই হাফ-ব্রিড, প্রত্যেকেই তার হর্স-কালচার সম্পর্কে আরও জানতে সংগ্রাম করে। অবশ্যই পরিত্রাণ থাকতে হবে, এবং পাপ অবশ্যই ক্ষমা করতে হবে। এর জন্য আমাদের সন্তান দরকার। একটি সাদা শিশু এবং একটি ইন্ডিয়ান শিশু, লিঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ নয়, শিশুসুলভ সারল্য দিয়ে তাদেরকে বাঁধা পড়তে হবে। তো সে গ্রেট আমেরিকান ইন্ডিয়ান উপন্যাস যখন লেখা শেষ হবে, ততক্ষণে শ্বেতাঙ্গরা সবাই ইন্ডিয়ান হয়ে গেছে এবং ইন্ডিয়ানরা সবাই মরে ভূত হয়ে গেছে। বিপজ্জনক জ্যোতির্বিদ্যা আমি বাইরে হাঁটতে হাঁটতে বিভোর হয়ে নক্ষত্র দেখতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ডেভিড, আমার বাচ্চা ছেলে, তার শুধু কাঁশি আর কাঁশি। তার স্বস্তি, তার ভালো থাকা নক্ষত্রের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে-কারণে আমি তাকে আদর করি তার অন্ধকার ঘরে, তাকে স্বস্তি দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু সেটা তো যথেষ্ট না। তার মা তারাদের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সে তার মায়ের স্তন ও দুধের জন্য কান্নাকাটি করলো। মায়েদের ভালোবাসার সাথে টেক্কা দেয়া বাপদের কাজ নয়। অন্ধকারে মায়েরা নক্ষত্রে মতো জ্বলজ্বল করে! মলিন ও ঈর্ষাকাতর—আমি সমগ্রের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। আমি জানি, এটা একটা ফালতু ব্যাপার কিন্তু যখন আমার বউ ভুখা অন্ধকারে আমার ছেলেকে খাওয়ায় আমি নিজেকে দূরতম নক্ষত্রে চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। একজন স্বার্থপর বাপ আমি, স্বস্তিতে থাকা আমার বউ ও ছেলেকে বিরক্ত করতে চেয়েছি। আমাকে মাফ করো হে নির্দয় মাবুদ, কারণ আমি বাইরে গিয়েছি এবং মুগ্ধ হয়ে নক্ষত্র দেখেছি এবং ভেবেছি আমি নক্ষত্রের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। দুর্দশা আমাদের জাগতিকতার দিকে ডাকে The morning air is all awash with angels . . . - Richard Wilbur পাঁচতারা হোটেলের বাথরুমে একটা নীল টেলিফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম কাকে ফোন করা যেতে পারে? প্লাম্বার, প্রোটোকলজিস্ট, ইউরোলজিস্ট নাকি পুরোহিত? কাকে? এরাই তো সব সময় আমাদের চারপাশে থাকে এবং এরাই প্রথম কলটা পাবার দাবীদার। আমি আমার বাবাকেই ফোন করার সিদ্ধান্ত নিলাম কারণ, বাথরুমে ফোন দেখে সে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। আমি বাসায় কল করলাম, মা ফোন ধরলে বললাম ‘হ্যালো মা, বাবাকে একটু দাও তো’। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এবং আমারও মনে পড়লো আমার বাবা প্রায় বছরখানেক আগে মারা গেছেন। আমি বললাম ‘ শিট, মা, আমি ভুলেই গেছি সে মারা গেছে, সরি মা কেমন করে যে ভুলে গেলাম!’ ‘না, ঠিক আছে’- তিনি বললেন। ‘‘আজকে সকালেও আমি তার জন্য এক কাপ ইন্সটান্ট কফি বানিয়ে তার টেবিলে রেখেছি—বিগত সাতাশ বছর ধরে ঠিক যে কাজটা আমি করেছিলাম। এবং আজকে বিকালের আগে আমি নিজের ভুলটা ধরতেই পারিনি।’’ আমার মা সেই ফেরেশতাদের দেখে হাসেন যারা আমাদের সবচেয়ে সাদামাটা দিনগুলিতে থমকে যাওয়া অব্দি অপেক্ষা করে এবং তারা তাদের শীতল ডানা দিয়ে আমাদের আত্মাকে চড় মারার আগে আমাদের ভুলে যাওয়ার প্রশংসা করে। ওইসব ফেরেশতারা আমাদের বোঝা বাড়ায় এবং আমাদেরকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। ওইসব আচোদা ফেরেশতারা আমাদের কাঁধে চড়ে বসে। ওইসব ফেরেশতারা, অন্তহীন পতিত হচ্ছে, আমাদের ফাঁদে ফেলছে, টানাহেঁচড়া করছে, শিকার করছে এবং প্রার্থনা করছে, ধুলোয়। ‘বিস্টিয়ারি’ হতে আমার মা বাবার সাথে তোলা তার একটি ছবি আমাকে পাঠায়, আনুমানিক ১৯৬৮ সালে তোলা এবং ছবিতে দু’জন ইন্ডিয়ান পুরুষও আছে। আমি তাকে ফোনে জ্ঞিজ্ঞাস করি ‘এই ইন্ডিয়ার লোকগুলা কারা?’ তিনি বললেন ‘আমি জানি না।’ ফলে অবধারিতভাবে পরের প্রশ্নটা দাঁড়ায় ‘তাহলে তুমি কেনো আমাকে এই ছবি পাঠালে?’ কিন্তু আমি সেটা করিনি। সেই অচেনা ইন্ডিয়ানদের একজন আকাশের দিকে আঙুল তুলে কিছু একটা দেখাচ্ছে তাদের সবার ঊর্ধ্বে একটি পাখি প্রশ্নচিহ্নের মতো দেখতে।
১৯৮৩ সালে উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলায় জন্ম আল ইমরান সিদ্দিকী’র। বর্তমানে তিনি স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাস করছেন। আল ইমরান সিদ্দিকী’র প্রকাশিত কবিতার বইগুলো হলো—কাঠঠোকরার ঘরদোর (২০১৫), ধুপছায়াকাল (২০১৮) ও গোধূলির প্যানোরামা ( ২০২০)। তিনি শিল্পসাহিত্য বিষয়ক ওয়েবম্যাগ ‘নকটার্ন’র সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত।