ঐতিহ্য ও ব্যক্তিপ্রতিভা : টি এস এলিয়ট :: অনুবাদ: হাসানআল আব্দুল্লাহ

১. ইংরেজী ভাষায় লেখালেখিতে আমরা ঐতিহ্যের কথা খুব একটা উল্লেখ করি না, যদিও ব্যবহারিক ভাবে এর অনুপস্থিতিতে অসন্তোষ প্রকাশে প্রায়শই এর কথা তুলি। আমরা নির্দিষ্ট করতে পারি না “কার ঐতিহ্য” বা “কোন ঐতিহ্য;” কিন্তু সর্বতভাবে কারো কারো কবিতার ক্ষেত্রে এমন বিশেষণ ব্যবহার করি যে তিনি “ঐতিহ্যিক” বা “ঘোর ঐতিহ্যিক।” এ-ও সম্ভব যে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয় কোনো রকম বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই। অন্যথায় সন্তোষজনক বা কার্যকরী প্রত্মতাত্ত্বিক পুননির্মাণে অনেকটাই অস্পষ্টতা থেকে যায়। বিজ্ঞান ও প্রত্মতাত্ত্বিক সূত্র উল্লেখ ব্যতীত ইংরেজ পাঠকদের কানে এ ধরনের লেখা গ্রহণীয় করা তেমন সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এখানে ব্যবহৃত শব্দ অবশ্য জীবিত বা মৃত কোনো কবির প্রশংসার জন্যে নয়। প্রত্যেক দেশ ও প্রত্যেক জাতির শুধু নিজস্ব সৃষ্টিশীলতাই নয়, সমালোচনারও নিজস্ব উপায় রয়েছে; এবং এ কথাও সত্য যে সমালোচনার ত্র“টিবিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তারা যতোটা অন্যমনস্ক, তার থেকে বেশী অন্যমনস্ক তাদের সৃষ্টিশীল প্রতিভার প্রতি। ফরাসী ভাষায় সমালোচনা সাহিত্যের প্রাচুর্য থেকে আমরা ওদের সমালোচনার অভ্যাস বা প্রক্রিয়ার কথা জানি, বা জানি বলে মনে করি; এবং এই সিদ্ধান্তে উপণীত হই (আমরা অসচেতন) যে ফরাসীরা আমাদের থেকে “গুরুতর সমালোচক,” যার ফলে কখনো কখনো আমরা আনন্দ বোধ করি এই ভেবে, ওরা আমাদের থেকে কম স্বত:স্ফূর্ত। হয়তো তা-ই, কিন্তু আমাদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে সমালোচনা শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই অনিবার্য, এবং স্পষ্টত আমাদের অনুভূতি প্রকাশে দ্বিধা করা উচিত নয়, যখন কোনো বই পড়ি, তার বিষয়ে আমাদের মনে যে সব ধারণা জন্মায়, তা প্রকাশের মাধ্যমে ওইসব সমালোচনার জন্যে আমাদের মনকে সবল করে তোলা দরকার। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটা সত্য বেরিয়ে আসতে পারে, তা হলো আমাদের চাপিয়ে দেবার প্রবণতা, যখন কোনো কবির প্রশংসা করি, তার লেখায় ফুটে ওঠা সেই সব দৃষ্টিভঙ্গির যা অন্য কারোর মতো নয়। এইসব দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর দিয়ে, কিম্বা তার কাজের অংশ বিশেষে আমরা ব্যক্তি ও মানুষের অদ্ভুত নির্যাস খুঁজে পাওয়ার ধারণা পোষণ করি। পূর্বতনদের থেকে, কিম্বা অব্যবহিত আগের কবিদের থেকে তার ব্যতিক্রমকে নির্বাচন করে আমরা তৃপ্তি পাই; আমরা আনন্দের জন্যে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি কেবল তাই যা তাকে আলাদা করে তোলে। তথাপি, আমরা এইসব পূর্ব ধারণা ছাড়াই যদি কোনো কবির লেখা পড়ি, আমরা প্রায়শই বুঝতে পারি যে শুধু তার শ্রেষ্ঠতম কাজই নয়, তার সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্ভবত তা-ই যার মধ্যে মৃত কবিরা, তার পূর্বতনেরা, তাদের অমরত্বের সূদৃঢ় প্রমাণ দিয়েছেন। আমি, অবশ্যই তাদের কৈশোরের ভাবলুতাপূর্ণ লেখার কথা বলছি না, বলছি সৃষ্টির শিখরে অধিষ্ঠিত সময়ের কথা।

তথাপি যদি নিকটতম পূর্ববর্তীতের অন্ধভাবে অনুসরণ করার নামই হয় ঐতিহ্যের সফল অনুসন্ধান, তাহলে অবশ্যই এই প্রক্রিয়াকে নিরুৎসাহিত করা দরকার। আমরা অনেক ছোটো ছোটো উত্তুঙ্গ স্রোতকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বালুতে হারিয়ে যেতে দেখেছি; এবং বুঝতে পেরেছি যে নতুনত্ব অবশ্যই দ্বিরুক্তির থেকে উত্তম। ঐতিহ্য অনেক ব্যাপকতর ও তাৎপর্যময়। এটি কিছুতেই বংশানুক্রমিক প্রাপ্তি নয়, তবে কেউ যদি এর অনুবর্তী হতে চায়, যথেষ্ট চর্চার ভেতর দিয়ে তা করা সম্ভব। সমন্বিত ঐতিহাসিক ধারণা, প্রথমত, যাকে আমরা অপরিহার্য বলে ধরে নিতে পারি, ওইসব কবিদের ক্ষেত্রে যারা পঁচিশের পরেও চর্চা চালিয়ে যান; এবং এই ধারণা উপলব্ধির অনুবর্তী, শুধুমাত্র অতীত সম্পৃক্ততায় নয়, বর্তমানেও। ইতিহাস সমৃদ্ধতা একজন কবিকে শুধু নিজস্ব প্রজন্ম ও সমাজের জন্যেই লিখতে বাধ্য করে না, পুরো ইয়োরোপের সাহিত্যের অনুভূতি নিয়ে, হোমার থেকে শুরু করে, যার মধ্যে যুগপৎ স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার নিজের দেশের সৃষ্টিশীল সাহিত্যের অস্তিত্ব-নির্ভর ক্রমর্ধমানতাও। এই ঐতিহাসিক চেতনা, যা সময়হীনতার সাথে পার্থিবের এবং পার্থিবের সাথে সময়হীনতার সমন্বয় ঘটায়, একজন লেখককে ঐতিহ্য সন্ধানি করে তুলতে সক্ষম। এবং একই সাথে একজন লেখককে তার সমসাময়িক কালে তীব্র ভাবে সময় ও স্থান সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

অন্যদিকে, ব্যক্তির প্রেক্ষিতে কোনো কবি বা শিল্পীর সম্পূর্ণ মূল্যায়ন সম্ভব নয়। তার গুরুত্ব, তার কদর, সাধারণত মৃত কবি ও শিল্পীদের সাথে তার শৈল্পিক সম্পর্কের মূল্যায়নের উপর নির্ভর করে। একক ভাবে তাকে মূল্য দেয়া যায় না, তাকে অবশ্যই স্থাপন করতে হয়, পাথক্য নির্ণয় ও তুলনার জন্যে, মৃতদের মধ্যে। আমি এটাকে নন্দনতত্ত্বের প্রধান শর্ত বলে মনে করি, শুধু সমালোচনার ঐতিহ্যিক মূল্যায়নে নয়। এও সত্য যে কবি সুনির্দিষ্ট ভাবে স্পষ্ট করে তুলবেন যে তিনি অবশ্যই অন্যদের সাথে সম্পৃক্ত, একপেশে নন; নতুন শিল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা-ই যুগপৎ ঘটেছিলো তার পূর্ববর্তীদের আপামর শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে। বিদ্যমান উৎকৃষ্ট নির্মাণ কৌশলগুলো পরস্পরের মধ্যে যে আদর্শ তৈরী করে দেয়, নতুনের (প্রকৃত নতুন) আবির্ভাবে তাই পরিবর্তিত শিল্প কৌশলের রূপ নেয়। বিরাজিত শৃঙ্খলা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে নতুনদের আবির্ভাবের আগেই; এই শৃঙ্খলাকে নতুনত্বের আলোকে রূপ দিতে হলে, বিদ্যমান পুরো ব্যাপারটিকে, সামান্যতম হলেও, বদলিয়ে দেয়া দরকার; যাকে বলা যায় সম্পর্কের সমানুপাতিকতা; প্রত্যেক শিল্পের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সর্বতভাবেই পুনর্বিন্যস্ত হয়; এবং এটাই নতুন ও পুরাতনের মাঝে সমঝোতার একমাত্র উপায়। ইয়োরোপিয় প্রকরণের, ইংরেজী সাহিত্যের এই অনুক্রমনের ধারণাকে যিনি অনুমোদন করবেন, তার কাছে সম্পূর্ণ ভাবে অসঙ্গত মনে হবে না যে বর্তমান যতোটা অতীতকে বদলাবে, অতীতও ঠিক ততোটাই বর্তমানকে পরিচালনা করবে। আর, যে কবি এইসব সম্পর্কে সচেতন, তিনি অবশ্যই তার মহান কর্তব্য ও প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারেও নিয়মিত সজাগ থাকবেন।

কিছুটা অদ্ভুত হলেও, তিনি সতর্ক থাকবেন যে তাকে অবশ্যম্ভাবী ভাবে অতীতের মানদণ্ডে বিচার করা হবে। আমি বিচার বলছি অবমাননা অর্থে নয়; কতোটা ভালো বা মন্দ বা উৎকৃষ্ট মৃতদের প্রেক্ষিতে তাও বিবেচ্য নয়, এবং অবশ্যই এই বিচার মৃতদের পরিবেশিত সমালোচনার আঙ্গিকেও নয়। এটা এক ধরনের বিচার, বা প্রভেদ নির্ণয় প্রক্রিয়া, যেখানে দুটো জিনিসের একটি দিয়ে অন্যটিকে পরিমাপ করা হয়। কেমলমাত্র নতুন কোনো কাজের স্বীকৃতি পাওয়া, প্রকৃত পক্ষে, একেবারেই কোনো স্বীকৃতির পর্যায়ে পড়ে না; এই স্বীকৃতিও নতুন নয়, এবং তা কোনো শিল্প মানের নাও হতে পারে। এবং আমরা কিছুতেই বলছি না যে নতুন কিছু অনেক বেশী মূল্যবান কারণ তাকে মেনে নেয়া  হয়েছে, যদিও মেনে নেবার এই পরীক্ষারও গুরুত্ব রয়েছে–পরীক্ষা, অবশ্যই তাই, যা আস্তে আস্তে সতর্কতার সাথে প্রতিফলিত হয়, কারণ আমরা কেউই স্বীকৃতি দেবার জন্যে অমোঘ বিচারক নই। আমরা বলি, এটা স্বীকৃত, এবং সম্ভবত স্বতন্ত্র, অথবা স্বতন্ত্রের মতো দেখায়; এবং হয়তো স্বীকৃতি পাবার যোগ্য; কিন্তু আমরা কখনো জানতে পারি না আসলে কোনটা সত্য।

অতীতের সাথে কোনো কবি তার বুদ্ধিবৃত্তিক মেলবন্ধনের প্রকৃত অবস্থান খুঁজে পেতে চাইলে, তিনি অতীতকে যেমন দলা পাকানো কোনো বৈষম্যহীন পরিত্যক্ত পিণ্ড হিসেবে নিতে পারেন না, তেমনি কেবল দু’একজনকে সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত সম্মানের আসনেও বসাতে পারেন না, পারেন না কোনো নির্দিষ্ট কালখণ্ডের পূজারী হতেও। প্রথম অবস্থাটি অগ্রহণীয়, দ্বিতীয়টি উঠতি যৌবনের অনভিজ্ঞতার জাতক, আর তৃতীয় প্রস্তাবটি আনন্দদায়ক ও বাঞ্ছনীয়। তাই, কবিকে অবশ্যই মূল স্রোত সম্পর্কে যথাযথ ভাবে সচেতন থাকতে হয়, যা সব সময় সম্মানীয় ব্যক্তি কিম্বা খ্যাতিমানদের সাথে চলতে বাধ্য নয়। তাকে সম্পূর্ণ রূপে অবশ্যম্ভাবী সত্যে সচেতন থাকতে হয় যে শিল্প কখনো উন্নতি ঘটায় না, এবং শিল্পের সরঞ্জাম সর্বদা একও নয়। তাকে আরো সচেতন থাকতে হয়, ইয়োরোপিয়দের মন সম্পর্কে–তার দেশের মানুষের মন সম্পর্কে–যে মন পরিবর্তনশীল, এবং এই পরিবর্তন এমন একটি উন্নতির ধারা যা চলার পথে কিছুই ছুঁড়ে ফেলে না, যা অতি প্রাচীন বলে শেক্সপীয়র, কিম্বা হোমার, কিম্বা পাথরগাত্রে অঙ্গিত ম্যাগডোলিনিয়ান নকশাকারদের শিল্পর্কম দূরে সরিয়ে রাখে না। এই যে উন্নয়ন, সম্ভবত পরিমার্জনা, সুনিশ্চিত জটিলতা, শিল্পের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো উন্নয়ন নয়। এমনকি সম্ভবত কোনো মনোবিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণেও নয়, এবং আমাদের কল্পনা গ্রাহ্যতায়ও নয়; শেষতক সম্ভবত এই জটিলতা অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত। কিন্তু অতীত ও বর্তমানের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো, সচেতন বর্তমান জ্ঞাত অতীতের একটা দিক, যেখানে অতীতের নিজস্ব জ্ঞাতার্থতা অনুপস্থিত।

 কেউ একজন বলেছিলেন, “মৃত লেখকরা আমাদের অনেক দূরবর্তী, কারণ আমরা তাদের থেকে অনেক বেশী জানি।” অবশ্যই, এবং তারা যে অমন আমরা তা-ও জানি।

স্পষ্টত, আমার বেঁচে থাকার স্বাভাবিক অভিপ্রায়ে ব্যক্তিবৃত্তিক কর্মসূচির একটা অংশ কবিতা। এই অভিপ্রায়ের দরকারী তত্ত্বে হাস্যকর রকমের পাণ্ডিত্য (পণ্ডিতিপনা) প্রয়োজন, যে দাবী যে কোনো দেব মন্দিরের টানে সহজেই প্রত্যাখ্যান করা যেতো। যথার্থ ভাবে এ-ও বলা যায় যে বিদ্যার প্রাচুর্য বিনষ্ট বা বিকৃত করে তোলে কাব্যিক অনুভূতিকে। তারপরেও, আমরা বিশ্বাস করতে ভালোবাসি, একজন কবিকে অবশ্যই ততোটুকু জানা দরকার যা তার প্রয়োজনীয় জ্ঞাতার্থের ক্ষমতা এবং প্রয়োজনীয় অলসতাকে অতিক্রম করে, জ্ঞানের সেই সীমাবদ্ধতা আশাতীত নয় যা কার্যকরী পর্যবেক্ষণের অবয়বে সম্যক উপস্থাপনের অন্তরায়; ড্রইংরুম সংস্কৃতি, কিম্বা তার চেয়েও বেশী দাম্ভিকতাপূর্ণ প্রচার প্রক্রিয়ায়। অনেকেই জ্ঞান আহরণে সক্ষম হলেও, ধীরগতি সম্পন্নরাই এর জন্যে নিয়মিত ঘাম ঝরান। একমাত্র প্লুতার্কের থেকে শেক্সপীয়র যতোখানি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস শিখেছেন, অনেকে হয়তো পুরো বৃটিশ মিউজিয়াম থেকেও তা পারেন না। এখানে যে বিষয়টির উপর বেশী জোর দেয়া দরকার তা হলো একজন কবিকে অবশ্যই তার অতীত সচেতনতায় বিকশিত হয়ে উঠতে বা ওঠার চেষ্টা করতে হয়, এবং একই ভাবে সারা জীবন এই বিকাশমানতার চর্চা চালিয়ে যেতে হয়।

উপর্যুপরি এই আত্মসমর্পণে যা ঘটে তাহলো তিনি নিজে এমন একটি অবস্থানে উত্তীর্ণ হন যা সবচে’ মূল্যবান। একজন শিল্পীর উন্নতি সাধন হলো বিরামহীন আত্মসমর্পণ, বিরামহীন ভাবে নিজস্ব ব্যক্তিত্বের বিলোপ সাধন।

বাকী থাকে এই ব্যক্তিত্ব-বিনাস প্রক্রিয়ার সংজ্ঞা নিরুপণ এবং ঐতিহ্যিক চিন্তার সাথে এর সম্পর্ক স্থাপন। ব্যক্তিত্ব বিলোপের এই পর্যায়ে শিল্প, বলা হয়ে থাকে, বিজ্ঞানের অগ্রগতির শর্তের সাথে সম্পৃক্ত। আমি, অতএব, বিবেচনার জন্যে আমন্ত্রণ করছি, একটি সম্মোহক প্রতিতুলনায়, এই বিক্রিয়াটি তখনই সম্পন্ন হয় যখন একটি পরিষ্কার প্লাটিনাম দণ্ড অক্সিজেন ও সালফার ডাইঅক্সাইড পূর্ণ চেম্বারে প্রবেশ করানো হয়।

২.

সৎ সমালোচনা এবং সংবেদনশীল প্রশংসা কবির নয়, কবিতার জন্যে বেশী প্রযোজ্য। আমরা যদি দৈনিকে প্রকাশিত চিৎকার সর্বস্ব আলোচনার দিকে তাকাই, এবং তার থেকে উত্থাপিত জনারণ্যের গুঞ্জরণ লক্ষ্য করি, তাহলে একটি বিশাল সংখ্যক কবির নাম পাবো; যদি ব্লু-বুকের জ্ঞান অর্জন না করে প্রকৃত কবিতাপাঠের আনন্দ পেতে চাই, এবং একটি ভালো কবিতা চাই, তা হয়তো কদাচিত চোখে পড়বে। আগের প্রবন্ধে আমি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি কবির কবিতা সম্পর্কে অন্য লেখকদের ধারণার গুরুত্ব, এবং মত দিয়েছি যে কবিতার ধারণা এ পর্যন্ত লিখিত সমগ্র কাব্য বিবেচনার একটা জীবন্ত উপলব্ধি। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে, কবিতা সম্পর্কিত আত্ম-উপলব্ধির তত্ত্ব হলো কবির সাথে তার লিখিত কবিতার সম্পর্ক। এবং আমি ইঙ্গিত করেছিলাম, একটি প্রতিতুলনার ভেতর দিয়ে, যে পুরোপুরি দক্ষ হয়ে ওঠার পর একজন কবির মনন  আর একজন অদক্ষ কবির মননের পার্থক্য পরিপূর্ণ ভাবে “ব্যক্তিত্ব”র মূল্যায়নের উপর নির্ভরশীল নয়, বেশী কৌতূহলউদ্দীপক হওয়াতেও নয়, নয় “বেশী বলার” দক্ষতায়, বরং উপযুক্ত মাধ্যম নির্মাণের পারঙ্গমতায়, যা বিশেষত বিবিধ অনুভূতি সমন্বয়ের স্বাধীনতার ভেতর দিয়ে নতুন বিন্যাসে সমর্পিত। 

 তুলনামূলক উদাহরণটি ছিলো একটি অনুঘটকের। যখন উল্লিখিত দু’টি গ্যাস প্লাটিনাম দণ্ডের উপস্থিতিতে মেশানো হয়, তারা সালফিউরাস এসিড তৈরী করে। এই মিশ্রণ একমাত্র সম্ভব ওই প্লাটিনামের উপস্থিতিতে; যদিও নতুন তৈরী এসিডে প্লাটিনামের কোনো চিহ্ন থাকে না, এবং প্লাটিনাম দণ্ডটিও পুরোপুরি অক্ষত থাকে; নিষ্ক্রিয়, নিরপেক্ষ ও অপরিবর্তিত থাকার ভেতর দিয়ে। কবির মনও ওই প্লাটিনাম দণ্ডটির মতো। হয়তো আংশিক কিম্বা একচেটিয়া ভাবে ব্যক্তির নিজস্ব অভিজ্ঞতার উপর কার্যকরী; কিন্তু, শিল্পী যতো নিখুঁত, তার মাঝে সম্পূর্ণ ভাবে ততোটাই আলাদা হয়ে ওঠে সেই ব্যক্তি যে দুর্ভোগ পোহায় এবং সৃষ্টি করে; ততোটাই নিখুঁত ভাবে আবেগের উপাদানকে পরিপুষ্ট ও রূপান্তরিত করে।

অভিজ্ঞতাটি, অবশ্য অনুমেয়, যেসব উপাদান নিয়ে পরিবর্তন-অনুঘটকের উপস্থিতিতে প্রবেশ করবে, তাদেরকে দু’ভাগে ভাগ করা চলে: আবেগ ও অনুভূতি। যিনি উপভোগ করেন তার উপরে শিল্পকর্মের প্রভাব অভিজ্ঞতা-নির্ভর শিল্পমান বিবর্জিত সৃষ্টির প্রভাব থেকে আলাদা। এটি হয়তো আবেগ থেকে তৈরী, কিম্বা অনেক কিছুর সমন্বয়; এবং নানা রকম অনুভূতি, অথবা বিশেষ শব্দ বা বাক্যাংশ বা চিত্রকল্পর প্রতি লেখকের জন্মগত পক্ষপাত, হয়তো যোগসূত্র স্থাপনের ভেতর দিয়ে প্রযুক্ত হয় তার রচনার সর্বশেষ ফলাফল। কিম্বা, হয়তো মহত কবিতা সৃষ্টি হয় কোনো সরাসরি আবেগের সমন্বয় ছাড়াই: পুরোপুরি অনুভূতির উপর নির্ভর করে। ইনফার্নোর কেন্টো ১৫ (ব্র“নেটো ল্যাটিনি) পরিস্থিতির প্রত্যক্ষ আবেগের উপর রচিত; কিন্তু ফলাফল, বিষয়ের যথেষ্ট জটিলতা থাকা সত্ত্বেও, শিল্পমানে অসামান্য। সর্বশেষ চতুষ্পদটি তুলে ধরে একটি ভাবমূর্তি, ভাবমূর্তি সম্বলিত একটি অনুভূতি, যা “এসেছিলো,” যা তৈরী হয়নি কোনো পূর্ব ঘটনার উপর নির্ভর করে, কিন্তু যা সম্ভবত কবির মানসিক অবস্থানের অবলম্বন, যতোক্ষণ না যোগসূত্র স্থাপনের জন্যে যথাযথ সমন্বয়ের আবির্ভব ঘটে। কবি চিত্ত বাস্তবিক ভাবে একটি ধারক যেখানে অগণিত অনুভূতি, বাক্যাংশ ও চিত্রকল্প একত্রিত হয়ে আনুক্রমিক অবস্থায় থাকে; যেগুলো সেখানেই অবস্থান করে যতোক্ষণ না সমস্ত ক্ষুদ্রাংশগুলো একত্রিত হয়ে একটি নতুন কবিতা তৈরীর কাঁচামাল সরবরাহের জন্যে কাজে লাগে।

 মহৎ কবিতার কয়েকটি স্তবক পাশাপাশি রেখে তুলনা করে দেখলে বোঝা যাবে বুনন ও বিন্যাসের কতোটা বৈচিত্র্য সেখানে রয়েছে, এবং কতোটা সুস্পষ্ট ভাবে নৈতিকতার “মাহাত্ম্য” এড়িয়ে গেছে। আবেগের প্রখরতা ও উপাদানের জন্যে “মহত” না হলেও, শিল্প নির্মাণের প্রবলতা, কিম্বা চাপ, যে ভাবে সংমিশ্রণ ঘটে, তা সন্দেহাতীত ভাবে গুরুত্ব বহন করে। পায়োলো ও ফ্রানসেসকার উপাখ্যান নির্দিষ্ট আবেগের বাহন, কিন্তু কাব্যের প্রবলতম বোধ এদেরকে সম্পূর্ণ রূপে আলাদা কিছুতে পরিণত করেছে, অন্তত যে অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ-আবেগ থেকে তা উঠে এসেছে, তার থেকেও। উপরন্তু আরো প্রবলতর, ক্যান্টো ২৬, ইউলিসিসের ভ্রমণ, যা সরাসরি আবেগের উপর নির্ভরশীল নয়। আবেগের প্রতিফলনের প্রক্রিয়ায় বিবিধ বৈচিত্র্য আনা সম্ভব: আগামেমননকে হত্যা, কিম্বা ওথেলোর যন্ত্রণা এমন শৈল্পিক ব্যঞ্জনা দেয় যা অনেকটা সম্ভাব্য মূলের কাছাকাছি, দান্তে বর্ণিত চেতনার থেকেও। আগামেমনন-এ শৈল্পিক আবেগ দর্শকের কার্যকরি আবেগের সমপর্যায়ের, আর ওথেলো নিজেই প্রধান চরিত্রের আবেগের রূপায়ক। কিন্তু শিল্প ও সংগঠিত ঘটনার ভেতরে পার্থক্য সর্বদাই সীমাহীন, আগামেমনন হত্যা ঘটনার সম্মিলনের জটিলতা আর ইউলিসিসের ভ্রমণের জটিলতা সেইক্ষেত্রে সম পর্যায়ের। উভয় ঘটনায়ই অভ্যন্তরীণ উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটে। একই ভাবে, কিটস-এর গীতিকাব্য অনেকগুলো অনুভূতির ধারক যা হয়তো নাইটেঙ্গেল সম্পর্কিত নয়, কিন্তু যাতে নাইটেঙ্গেল, অংশত ওর আকর্ষণীয় নামের কারণে, এবং অংশত ওর সুখ্যাতির জন্যে, একীভূত হওয়ার পরিবেশ তৈরী করে।

যে বিষয়টি আমি স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি তা সম্ভবত আধ্যাত্মবিদ্যা ও চিত্তের একত্রীকরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমার মতে কবি কোনো “ব্যক্তিত্বের” প্রবক্তা নন, বরং নির্দিষ্ট মাধ্যমের প্রবক্তা, যা শুধুমাত্র মাধ্যম এবং ব্যক্তিত্ব নয়, যেখানে গভীরানুভূতি ও অভিজ্ঞতা সংযুক্ত হয় অদ্ভুত অপ্রত্যাশিত উপায়ে। গভীরানুভূতি ও অভিজ্ঞতা সেইসব লোকের জন্যেও প্রযোজ্য যিনি কবিতায় একেবারেই আগ্রহী নন, এবং যে সব অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, সেগুলো হয়তো সাধারণ মানুষের চিন্তায় ও ব্যক্তিত্বে অগ্রহণীয় নাও হতে পারে।

 আমি একটি স্তবকের উদ্ধৃতি দেবো যা অনেকটাই অপরিচিত হওয়ায়–আলোকে কিম্বা অন্ধকারে, উল্লিখিত পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে–বিশুদ্ধ মনোযোগ দাবী করে:

এবং এখন আমি এমনকি নিজেকেই শাস্তি দেবো
তার অমন সৌন্দর্যে বোকা বনে যাওয়ায়, যদিও তার মৃত্যু
কোনো নিয়মনিষ্ঠ কৃতকর্মের প্রতিশোধ হয়ে দাঁড়ায়নি।
রেশমী উত্তাপ কি তোমার জন্যে বর্ধিত করেছে তার
হলুদাভ শ্রম? তোমার জন্যে কি সে ফিরে আসবে?
ঈশ্বরীত্ব, নারীত্বের উপাসনায় কি বিক্রি হয়ে গেছে
বিপ্রতীপ সময়ের দুর্বলতম কল্যাণে? কেনো
তোমরা মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করছো উচ্চাশার পথে,
এবং জীবন, বিচারকের ঠোঁটের উচ্চারণে দিচ্ছ পুরে,
সেই জিনিসটিকে পরিশোধন করতে–মানুষ ও অশ্বের
বীরত্বকে যে নারীর জন্যে নিয়ত প্রহার করে?

এই স্তবকে (যা প্রত্যক্ষ প্রসঙ্গের ভেতরে পড়ে) ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো আবেগেরই মিশ্রণ ঘটেছে: সৌন্দর্যের প্রতি একটি মারাত্মক টান, এবং সমভাবে প্রবল হয়ে উঠেছে কদর্যতা যা একই সাথে বিপ্রতীপ ও ধ্বংসাত্মক। আবেগ তাড়িত বৈপরীত্বের এই সমতা নাটকীয় উপস্থাপনায় অর্পিত হয়েছে, যেখানে ভাষা প্রয়োগ যথোপযুক্ত হলেও, পরিস্থিতি কিন্তু তার তুলনায় অপর্যাপ্ত। বলা যায়, নাটকের কাঠামো নির্মাণে আবেগকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ প্রতিফলন, প্রধান সুর, বেশ কিছু ভাসমান অনুভূতির কারণে, প্রযুক্ত আবেগের সাথে সম্পর্কিত থাকায়, স্পষ্টত অগভীর নয়, একত্রিত ভাবে আমাদের নতুন শিল্প বৈভব উপহার দেয়।

 এটা তার ব্যক্তিগত আবেগের অংশ নয় যা তাকে কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা প্রবাহে উদ্বুদ্ধ করেছিলো, যাতে কবি কোনো না কোনো ভাবে আকৃষ্ট বা প্রলুব্ধ ছিলেন। হতে পারে তার ওই নির্দিষ্ট আবেগ গতানুগতিক, কিম্বা কর্কশ, কিম্বা এক-ঘেয়ে। তার কবিতার আবেগ হয়ে উঠবে অত্যন্ত জটিল, কিন্তু সাধারণের আবেগের জটিলতার সাথে কিম্বা গতানুগতিক জটিলতার সাথে যা সম্পৃক্ত নয়। বস্তুত, কাব্য তরঙ্গ  মানুষের নতুনতর আবেগ প্রকাশের পক্ষে, এবং সমস্যা হলো, ভুল জায়গায় নতুনত্বের এই সম্যক অন্বেষা বিকৃত সত্তার আবিষ্কার করতে বাধ্য। নতুন আবেগকে খুঁজে বের করাও কবির কাজ নয়, কিন্তু গতানুগতিকের ব্যবহার কবিতার পর্যায়ে তুলে ধরে এমন একটি অভিব্যক্তি তৈরী তার লক্ষ্য যা কোনো অবস্থাতেই আসল আবেগের অনুবর্তী নয়। এই ক্ষেত্রে যেসব আবেগের সাথে তিনি একেবারেই পরিচিত নন তারাও পরিচিত আবেগের মতো কাজ করতে পারে। সুতরাং, আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করবো যে “আবেগ শান্তিপূর্ণ অবস্থানের সংশ্লেষণ” একটি অগ্রহণীয় সূত্র। শান্তিপূর্ণ অবস্থানের জন্যে আবেগ, বা আবেগের হালকা সংশ্লেষণ, বিকৃত অর্থের বহিপ্রকাশ ঘটায়। এটি একটি মনোসংযোগ, এবং মনোসংযোগের দ্বারা তৈরী নতুন উপজীব্য, যা ব্যাপক সংখ্যক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে কার্যকর যা বাস্তবসম্পত ও কর্মক্ষম ব্যক্তির জন্যে কোনো অভিজ্ঞতাই উপস্থাপন করে না; এটা এমন মনোসংযোগ যা সচেতন ভাবে কিম্বা আপনাআপনি ঘটে না। এইসব অভিজ্ঞতা “সংশ্লেষণ” নয়, এবং এরা একত্রিত হয় একটি আবহাওয়ায় যা “শান্ত” এবং শুধুমাত্র ঘটনা প্রবাহের উপর কার্যকরণ সম্বন্ধে গতিশীল। অবশ্যই, এটাই সম্পূর্ণ কাহিনী নয়। কবিতা লিখতে সচেতনতা ও স্বেচ্ছাশক্তির বিশাল অবদান রয়েছে। বস্তুত, একজন খারাপ কবি সাধারণত সেইখানটিতে সচেতন যেখানে তার অসচেতন থাকা দরকার, এবং অসচেতন যেখানে তার সচেতন থাকা উচিত। দুটো ভুলই তাকে “ব্যক্তি কেন্দ্রিক” করে তোলে। কবিতা আবেগের ঢিলেঢালা প্রয়োগের ফসল নয়, বরং আবেগ থেকে মুক্তির পথ; ব্যক্তি কেন্দ্রিকতার অভিব্যক্তি নয়, ব্যক্তি কেন্দ্রিকতা থেকে মুক্তির উপায়। কিন্তু, অবশ্যই, যাদের আবেগ ও ব্যক্তিত্ব আছে কেবল তারাই জানেন এর থেকে মুক্তির জন্যে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার।

৩.

এই প্রবন্ধ আধ্যাত্মবাদ ও অতীন্দ্রিয়বাদকে সীমান্তে থামিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করছে, এবং একে প্রযুক্ত করছে সেই বাস্তব উপসংহারে যা সম্পন্ন হবে দায়িত্ববান ব্যক্তির দ্বারা যিনি কবিতায় আগ্রহী। কবিতে নয়, কবিতায় যথাযথ আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে এই উচ্চাভিলাষী উদ্দেশ্য: প্রকৃত কবিতা, ভালো বা খারাপ, সনাক্ত করতে যা নির্দেশকের মতো কাজ করবে। অনেক মানুষ আছেন যারা কবিতায় যথোপযুক্ত আবেগের প্রতিফলনকে গুরুত্ব দেন, কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষই প্রায়োগিক শ্রেষ্ঠত্বের গুরুত্ব বোঝেন। কেবল দু’একজনই জানেন কোথায় গুরুত্বপূর্ণ আবেগ প্রতিফলিত, যে আবেগ শুধু কবিতায় প্রযোজ্য কবির নিজস্ব ইতিহাসের জন্যে নয়। শিল্পের আবেগ ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার বাইরে। কবিতার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ না করে, একজন কবি এই সমষ্টিকতার বোধে কিছুতেই পৌঁছাতে পারেন না । শুধুমাত্র বর্তমানে বসবাস করে তিনি তার একান্ত কর্তব্য কর্ম সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধিতে আসতে পারেন না, তাকে বসবাস করতে হয় অতীত নির্ধারিত বর্তমানের ভেতর, কোনটা মৃত আর কোনটা প্রকৃত পক্ষে জীবিত তার স্পষ্ট ধারণা ছাড়া তিনি তা করতে সক্ষম নন।

২০১২

লেখক-পরিচিতি:

। হাসানআল আব্দুল্লাহ । দু’টি ইয়োরোপীয় কবিতা পুরস্কার, হোমার মেডেল (২০১৬) ও ক্লেমেন্স জেনেস্কি প্রাইজ (২০২১), প্রাপ্ত বাংলাদেশী-আমেরিকান কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ’র বিচরণ সাহিত্যের নানা শাখায়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৪৯। বাংলা ছাড়াও অনূদিত হয়ে ইংরেজী, চাইনিজ ও পোলিশ ভাষায় প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতার বই। মহাবিশ্বের চলমানতার বৈজ্ঞানিক সমীকরণের সাথে খেটে-খাওয়া মানুষের আর্ত-হাহাকারের যোগসূত্র স্থাপন করে লিখেছেন মহাকাব্য ‘নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ।‘ তাঁর ‘কবিতার ছন্দ’ (বাংলা একাডেমি, ১৯৯৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য-সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সম্পাদনা করেছেন ‘বিশশতকের বাংলা কবিতা’(২০১৫), অনুবাদে প্রকাশ করেছেন ‘বিশ্ব কবিতা সংগ্রহ’(২০১৭) ও আমেরিকা থেকে ‘কনটেম্পোরারি বাংলাদেশি পোয়েট্রি’ (২০১৯)। লিখেছেন উপন্যাস, ছোটোগল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, গান ও ভ্রমণকাহিনি ইত্যাদি। দশের অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা। আমন্ত্রিত হয়েছেন চীন, গ্রীস, পোল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে। ২০০৭ সালে পেয়েছেন কুইন্স ব্যোরো প্রেসিডেন্টের বিশেষ সম্মাননা, ২০১৩ সালে স্বতন্ত্র সনেটের জন্যে লেবুভাই ফাউন্ডেশন পুরস্কার, ২০১৭ সালে কবির পঞ্চাশ উদযাপন কমিটির সম্মাননা স্মারক ও ২০১৯ সালে পেয়েছেন নিউইয়র্ক কালচারাল এফেয়ার্স থেকে অনুবাদ গ্রান্ট। তিনি নিউইয়র্ক শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র গণিত শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক কবিতা পত্রিকা ‘শব্দগুচ্ছ’ সম্পাদক।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s