অ্যাশবেরি বলেছিলেন, “শিল্প তখনি সর্বোত্তম, যখন সে চেতন এবং অবচেতনের যৌথ ফসল” । পরাবাস্তববাদী কবি অ্যাশবেরিকে তার সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী আমেরিকান কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেঁচে থাকতে অ্যাশবেরি কুড়িটিরও বেশি কবিতার সংকলন প্রকাশ করেছেন এবং জিতে নিয়েছেন কবিতার জন্য প্রায় প্রতিটি সম্মানিত আমেরিকান পুরস্কার, যার মধ্যে ১৯৭৬ সালে “Collection Self-Portrait in a Convex Mirror’র জন্য পুলিৎজার পুরস্কারও রয়েছে। উত্তর-আধুনিক জটিলতা এবং অস্পষ্টতার জন্য খ্যাত অ্যাশবেরির কাজ এখনও বিতর্কিত।
অ্যাশবেরি নিউইয়র্কের রোচেস্টারে জন্মগ্রহণ করেন। হার্ভার্ড এবং কলম্বিয়া-স্নাতক অ্যাশবেরি ১৯৫৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে ফ্রান্সে যান, পরবর্তী দশকের বেশিরভাগ সময় তিনি সেখানেই বসবাস করেন। অ্যাশবেরি’র প্রথম দিককার কাজে ওয়ালেস স্টিভেনস, বরিস পাস্তেরনাক এবং বহু ফরাসি পরাবাস্তববাদী কবি এবং অডেনের প্রভাব দেখায়। অ্যাশবেরির ‘অ্যাভান্ট-গার্ড’ কবিতা সত্তরের দশকে ক্রমবর্ধমান সমালোচনামূলক স্বীকৃতি লাভ করে এবং অ্যাশবেরিকে একজন অস্পষ্ট অ্যাভান্ট-গার্ড পরীক্ষাবাদী থেকে আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবিতে রূপান্তরিত করে। তাঁর প্রশংসিত কাজগুলির মধ্যে ‘নোটস ফ্রম দ্য এয়ার: সিলেক্টেড লেটার পোয়েমস’ (২০০৭), আন্তর্জাতিক গ্রিফিন কবিতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিল; ‘সেল্ফ-পোর্ট্রেট ইন এ কনভেক্স মিরর (১৯৭৫) তিনটি প্রধান আমেরিকান পুরস্কার লাভ করে – পুলিৎজার, ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড এবং ন্যাশনাল বুক ক্রিটিক সার্কেল অ্যাওয়ার্ড- এবং তাঁর প্রথম দিককার বই, ‘সাম ট্রিস’ (১৯৫৬), ডব্লিউ. এইচ. অডেন দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল ‘ইয়েল ইয়ংগার পোয়েটস সিরিজ’-এর জন্য। ‘আমেরিকান লাইব্রেরি’ ২০০৮ সালে তাঁর সংগৃহীত কবিতার প্রথম খণ্ড প্রকাশ করে।
সমস্ত কর্মজীবনজুড়ে শিল্পের বিভিন্ন শাখায় সক্রিয় থাকায়, তিনি আর্ট নিউজের নির্বাহী সম্পাদক এবং নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন এবং নিউজ উইকের শিল্প-সমালোচক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ‘আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস’ এবং ‘আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসে’র সদস্য এবং ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমেরিকান কবিদের একাডেমির চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি দু’টি গুগেনহেইম ফেলোশিপ পেয়েছেন এবং ১৯৮৫ সালে ম্যাকআর্থার ফেলো নির্বাচিত হন। তাঁর কাজ বিশ্বের পঁচিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
অ্যাশবেরি তাঁর জীবনসঙ্গী ডেভিড কারমানির সাথে নিউইয়র্ক সিটি এবং নিউইয়র্কের হাডসনে থাকতেন। ৩’রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালে ৯০ বছর বয়সে অ্যাশবেরি হাডসনে তাঁর বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘর (This Room)
যে-ঘরে প্রবেশ করলাম, সে ঘরটি ছিল এই ঘরের স্বপ্ন।
সোফায় থাকা সমস্ত পাগুলো ছিল নিশ্চিতভাবে আমার।
ডিম্বাকৃতি কুকুরের পোট্রেট —
সেটি আমার ছেলেবেলা।
খানিকটা ঝলমলে, খানিকটা ম্রিয়মাণ।
আমাদের প্রতিদিনের দুপুরের খাবার ছিল ম্যাকারনি
রবিবার ছাড়া, যেদিন প্ররোচিতভাবে পরিবেশিত হতো
একটি ছোট কোয়েল। তোমাকে এসব কেন বলছি?
তুমি তো এখানে নেই।
গালাজুনোভিয়ানা (Glazunoviana)
লাল টুপি পরা সেই লোক
মেরু ভালুকের সাথে সেও কি এখানে?
ছায়া-দেয়া সেই জানালা,
সেও কি এখানে?
আর ছোটোখাটো সব সাহায্য,
আকাশে আমার স্বাক্ষর,
উত্তরমেরুর গ্রীষ্মরাতের খড়কুটো?
ভালুকটি
মরে আছে জানালার পাশে।
সেই সুন্দর উপজাতিগুলো সবেমাত্র চলে গেছে উত্তরে।
নিভুনিভু সন্ধ্যায় মার্টিনগুলো আরো ঘন হয়ে উঠেছে ।
ডানাওয়ালা নদীগুলো ঘিরেছে আমাদের
আর নিদারুণ ক্লেশ।
সেই মহান স্তম্ভ-শির (Grand Abacus)
সম্ভবত এই উপত্যকাটিও নিয়ে যায় পুরাতন কোনো এক মাথায় ।
কিন্তু বিকিকিনির ফ্যাকাশে মুখ ছাড়া
এই তৃণভূমির জাল আর কে ছিঁড়তে পারে?
তৃণভূমিতে একটি চেয়ার রেখে, চলে গেছে সে — অনেক দূরে।
গ্রীষ্মে মানুষ বেড়াতে আসে, মাথা নিয়ে মাথা ঘামায় না।
সৈন্যরা মাথা নিচু করে মাথা দেখতে আসে। লাঠিটি লুকিয়ে থাকে।
আকাশ বলে, ” ছেলেরা মেয়েরা, এইখানে আমি,”
কোলাহলে লুকাতে চেষ্টা করে লাঠি ।
ধূলিময় তৃণভূমিতে উড়ে বেড়ায় আনন্দিত পাতারা।
“আমি তাকে দেখতে চাই” মাথা প্রসঙ্গে একজন বলে, যে
শহর হওয়ার ভণিতা বন্ধ করেছে ।
দেখো! তার বীভৎস পরিবর্তন। পড়ে যাওয়া কানগুলো —হাস্যরত মানুষ।
সমুদ্রের পাশে অস্পষ্ট চামড়াগুলো —সম্ভবত বাচ্চা, তারা বলে, “আমরা শিশু” ।
চোখগুলো—দাঁড়াও! কী বিশাল বৃষ্টির ফোঁটা!
চোখগুলো—দাঁড়াও, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না,
ওরা তৃণভূমিতে হাঁপিয়ে ওঠা কুকুরের থাবা?
সবগুলো চোখ সুন্দর! আর এখন নদী এসেছে
আমাদের সর্বশেষ অস্তিত্বটুকু মুছে দিতে ।
দিনের শুরুতে কে তাকে জানতো?
ধূমকেতুর মতো ঘুরে বেড়ানোই ভালো, অন্যদের সাথে
যদিও কেউ তাদের দেখে না।
কত দূরে সেই জ্বলন্ত শিখা! “বাচ্চারা, তাড়াতাড়ি করো!”
ফিরে আসা পাখিরা, বলে, ” মিথ্যা বলেছি, আমরা উড়ে যেতে চাই না।”
কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
অদৃশ্য হয়ে গেছে শিশুরা।
বিচরণ (Just Walking Around)
তোমাকে কী নামে ডাকবো?
আসলে, তোমার কোনো নামের দরকার নেই, কারণ
তারাদের নামগুলো কোনো-না-কোনোভাবে
তাদেরকে মানিয়ে যায়। শুধু হেঁটে চলা,
কারো কারো কাছে কৌতূহলের বিষয়,
কিন্তু তুমি ব্যস্ত
আত্মার পিছনে গোপন দাগ নিয়ে
কথা বলতে, ঘুরে বেড়াতে
হাসিমুখে নিজের এবং অন্যদের সাথে
হয়ত এটা এক ধরনের নিঃসঙ্গতা
আবার একইসাথে অস্বস্তিকর
অর্থহীন, আবারও সেই উপলব্ধি যে
দীর্ঘতম পথ কার্যকর পথ,
দ্বীপগুলিকে ঘিরে পাক খায়,
যেন ক্রমাগত পরিভ্রমণ একই বৃত্তে
সমাপ্তির কাছাকাছি এসে
ভ্রমণের পর্বগুলো এখন
খোলা কমলালেবুর মত উন্মোচিত।
সেখানে আলো, সেখানে রহস্য, সেখানে খাদ্য।
আসো দেখে যাও ।
আমার জন্য নয়, এর জন্য আসো।
আর যদি তখনও সেখানে থাকি,
অনুমতি দিও,
যেন আমাদের দেখা হয়।
কবি লায়লা ফারজানা পেশায় স্থপতি। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক, ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো থেকে আরবান ডিজাইন-এ এবং নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবান ডিজাইন ও স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি নিউ ইয়র্ক সিটি স্কুল কনস্ট্রাকশন অথোরিটিতে স্থপতি হিসাবে কাজ করছেন। এর বাইরেও লায়লা ফারজানা ডিস্টুডিওডি আর্কিটেক্টস এবং ইঞ্জিনিয়ার্স (দ্য স্টুডিও অফ ডিজাইন)-এর প্রধান। এ যাবৎ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো: ঝরা পাতার র্যাপসোডি ( কবিতা, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২) ও মার্কিন দেশের কবিতা ( অনুবাদ, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২৩)। একজন নাট্যকর্মী হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে।