এডুয়ার্ডো সি কোরালের জন্ম ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে। বর্তমানে তিনি এনসি স্টেট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে এমএফএ সহকারী অধ্যাপক। ২০১১ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত তার প্রথম কবিতার বই ’স্লো লাইটনিং’ প্রকাশের পর তিনি Yale Younger Series Poets Award অর্জন করে এবং লাতিন বংশোদ্ভূতদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার লাভ করেন। ২০২০ সালে প্রকাশিত তার অপর গ্রন্থ ’গিলোটিন’ সমকামী-কবিতার জন্য ২০২১ ল্যাম্বদা সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয় এবং National Book Award for Poetry’র সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও স্থান করে নেয়।
Author: nocturnemagazine
ফরমালিনশালীন :: অমিতাভ পাল
আজকাল পচা মাছ কেনার জন্য বাসার লোকের বকা আমাকে খেতে হয় না বললেই চলে। বরং আয়েশ করে মাছ খেতে পারি। কিন্তু অবস্থাটা এরকম ছিল না বছর দশেক আগেও। তখন প্রায়ই মাছ কিনে আনন্দ আর উৎফুল্লতায় ভরে উঠে একটা নির্ভার বেলুনের মতো বাসায় ফেরার পর চুপসানো বেলুনে পরিণত হতে আমার দেরি হতো না। কারণ ওই মাছ। চকচকে খোলসের ভিতরে তারা ঢেকে রাখতো তাদের পচা শরীরটাকে। আর আমার সব অভিজ্ঞতাকে বুড়া আঙুল দেখিয়ে তারা ডাস্টবিনে চলে যেতো হাসতে হাসতে। আর আমরা সপরিবারে একটা আমিষহীন রাত্রি যাপন করতাম কেবলমাত্র আমারই দোষে।
এডি ভ্যান ভিলিট’র দু’টি কবিতা :: অনুবাদ: আলম খোরশেদ
বেলজিয়ামের অন্যতম প্রধান কবি এডি ভ্যান ভিলিট’র (Eddy van Vliet) জন্ম ১৯৪২ সালে। পেশায় আইনজীবী হলেও ভ্যান ভিলিট মনে-প্রাণে একজন কবিই ছিলেন এবং তাঁর ষাট বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে কবিতা লিখেওছিলেন প্রচুর। সব মিলিয়ে তাঁর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা কুড়ির কাছাকাছি। শৈশবে আচমকা বাবার গৃহত্যাগ তাঁর সারাজীবনের কবিতায় প্রবলভাবে প্রভাব ফেলেছে। তাঁর কবিতায় তাই ঘুরে-ফিরেই স্মৃতি ও বিস্মৃতি, বিচ্ছেদ ও মৃত্যু, শোক ও সন্তাপ, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের হাহাকারধ্বনি শোনা যায় নানা আঙ্গিকে ও অবয়বে। একদিকে তিনি যেমন মার্কিন কবি রবার্ট লাওয়েলের ’স্বীকারোক্তিমূলক কবিতা’ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, অন্যদিকে আচ্ছন্ন ছিলেন সুইডেনের নির্জনতাপ্রিয় কবি টমাস ট্রান্সট্রোমারের নম্রকণ্ঠ আত্মবীক্ষণ আর জীবনের গভীরতর সংবেদনায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: The Great Sorrow, 1974; After the Laws of Parting and Autumn, 1978; Years after March, 1983; The courtyard, 1987; The future thief, 1991; Poetry: the Case for the Defence, 1991; Father, 2001 ইত্যাদি। এখানে অনূদিত কবিতাদুটি উৎকলিত হয়েছে John Van Tiel এর করা তাঁর কবিতার ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থ Farewell and Fall থেকে।
জ্যাক কেরুয়াক’র হাইকু :: অনুবাদ: আল ইমরান সিদ্দিকী
জ্যাক কেরুয়াক (১২ মার্চ, ১৯২২— ২১ অক্টোবর, ১৯৬৯) একজন প্রখ্যাত মার্কিন কবি ও ঔপন্যাসিক। তিনি উইলিয়াম এ. বারোজ ও অ্যালেন গিন্সবার্গের সাথে মিলে বিট জেনারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিট জেনারেশন তাদের শিল্প-সাহিত্য ও বিবিধ কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। দারিদ্রতা, মাদক, জ্যাজ, আধ্যাত্মিকতা ও বৌদ্ধবাদের মতো ইস্যুগুলির সংমিশ্রণে এই জেনারেশনের মতাদর্শ গড়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধগুলিকে অস্বীকার করা ও বদলে দেয়ায় বিট প্রজন্ম ছিল অঙ্গীকারবদ্ধ । অনেকেই জ্যাক ক্যারুয়াককে ‘বিট জেনারেশনের জন্মদাতা’ও বলে থাকেন। মূলত ঔপন্যাসিক হিসেবেই জ্যাক কেরুয়াক অত্যাধিক সমাদৃত। কিন্তু কবি হিসেবেও তাঁর সমাদর কম নয়। দ্য টাউন অ্যান্ড দ্য সিটি(১৯৫০), অন দ্য রোড (১৯৫৭) এবং ডেসোলেশন এঞ্জেলস (১৯৬৫) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলির অন্যতম এবং তাঁর উপন্যাসগুলি মূলত আত্মজৈবনিক । হাইকু’র একটি নিজস্ব ধারা সৃষ্টির জন্যও তিনি আলোচিত ও প্রশংসিত।
চৈনিক কবিতা :: অনুবাদ : সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ
ট্রিবিউট টু উৎপল ও বঙ্গজ অন্যান্য তরুণকুমার :: জাহেদ আহমদ
‘ভোরবেলার রৌদ্রে বসে বাজার’ যেই দেশে, সে-দেশ হয়তো ‘অন্য দেশ, অন্য কোনো রাজার’, সেইখানে বয় ‘চিরদিনের নদী’ এবং ওড়ে মেঘবাহিতা ‘পাখি’, কিংবা কাকজ্যোৎস্নারাত্তিরের শেষে ‘ভোরবেলা গাভীর স্বননে’ জেগে-ওঠা মানুষ ও মোরগের যথাক্রমে গর্গল আর বাঙ, সেই দেশ রঙিন অথবা রঙহীন ধর্তব্য নয়, সেই দেশে ‘তোমার স্বর ধ্বনিজাল — প্রতিধ্বনিজাল — পাতায় শিশিরবিন্দু মুছে যায় — মুছে যায় পলাতক কিশোরের ভীরু কণ্ঠ, সমস্ত দুপুর ভরে শরবন ক্ষয়ে যায়’, এবং ‘আমার চেতনা শুধু শব্দের করস্পর্শে ভেঙে যায়’ যেই দেশে যেয়ে, সেখানে ‘নির্জন বালির বুকে পড়ে-থাকা নৌকাগুলি তোমাদের জানে’, এবং আমিও ‘তাদের ছায়ায় বসে’ গেয়ে গেছি বিরামহারা বাসনার গান ‘সারাদিন হৃদয়পণ্যের’,
জেমস জয়েস’র ইউলিসিস (পর্ব-৭) :: পায়েল মণ্ডল
এপিসোড—৩ (প্রটিয়াস): স্ট্রিম অফ কনশাসনেসের এমন অনবদ্য লেখনী যা এই এপিসোডে লেখা হয়েছে, তা অন্য কোনো লেখকের লেখায় পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। জয়েস ভাষার কুলীনতা ভেঙ্গে দেন, তিনি সৃষ্টি করেন তাঁর নিজের ভাষা, যাতে মানা হয় না ব্যাকরণ। তিনি নির্মাণ করেন নতুন নতুন শব্দ একাধিক শব্দ একত্রিত করে। আর এক স্ট্রিম অফ কনশাসনেসের ধারক ভার্জিনিয়া উলফ কিন্তু জয়েস থেকে একেবারে ভিন্ন ভাষা ব্যবহার করেছেন। তিনি জয়েসের মত কোনো এক্সপেরিমেন্টে যান না।
এপিসোড তিন-এ আমরা দেখি মাত্র একটি এ্যাকশন আর বাকী অংশ জুড়ে বর্ণিত হয় স্টেফান ডেডেলাসের চিন্তাপ্রবাহ। তার মনোলগ, ডায়ালগ, অন্তর্জগতের কথোপকথন। স্টেফানের ভাবনা সরলরৈখিক ভাবে এগোয় না বরং সেটা এগোয় হঠাৎ দিক বদলে। জয়েস চিন্তার জিগ’স প্যাঁচগুলোকে একে একে জোড়া দিয়ে ভাবনার একটা অবয়ব নির্মাণ করেন পাঠকদের জন্য। চিন্তাকে চিত্রিত করেন প্রতীকী শব্দে। প্রতীকী শব্দে বিশ্লেষণ করেন দর্শন। তিনি সৃষ্টি করেন এক নতুন ভাষা, জয়েসিয়ান ভাষা। আর এখানেই জয়েস ও অন্য স্ট্রিম অফ কনশাসনেসের লেখকদের মাঝে নিজের অনন্য পার্থক্য আঙ্গুল দিয়ে সগর্বে দেখিয়ে দেন। তিনি বুঝিয়ে দেন তিনি এক এবং একক।
প্রগাঢ়তম বন্ধু :: অমিতাভ পাল
কবিতা কেনো লিখি—কবিতা লেখার শুরুর দিনগুলিতে এই প্রশ্নের জবাব দেয়া সহজ ছিল। কিন্তু যতোই দিন যাচ্ছে, যতোই জড়িয়ে যাচ্ছি কবিতার সঙ্গে, ততোই অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর। কবিতা লেখার শুরুর দিনগুলিতে শুধু কি কবিতা লিখতাম? প্রেম করা, গান গাওয়া—এরকম আরো কত কাজে ছড়িয়ে পড়েছিল আমার হৃদয়। যৌবনের অফুরন্ত শক্তির প্রতাপে তখন যাতেই হাত দেই তাতেই সোনা ফলে। আর কী দৃপ্ত সব প্রতিজ্ঞার দল!
তারপর গড়াতে থাকা দিনগুলির সাথে সাথে ঝরে গেছে অনেক কিছু। আর তাতে ক্রমশ নিঃসঙ্গ হতে হতে যা থেকে গেল—অর্থাৎ কবিতা—সেইই হয়ে উঠলো প্রগাঢ়তম বন্ধু। কিন্তু কবিতা কেনো থাকে? কবিতাকে যে ভালোবেসেছে, কবিতার সঙ্গের স্বাদ যে পেয়েছে—সে আসলে কবিতাকেই বিয়ে করে ফেলে শেষ পর্যন্ত। আর কবিতাও ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে, জানে যুগ্ম হয়ে জীবন কাটাতে। তাই এই জুটির বিচ্ছেদ হয় না সচরাচর।
দেশান্তর এবং মেটাফর: গান ও গরিবির নাগরিক মোলাকাত প্রসঙ্গে :: সুমন রহমান
ভূমিকা: নগরগরিবের সাংস্কৃতিক পরিচয় সাম্প্রতিক বাংলা গানে কীভাবে উৎপাদিত হচ্ছে, এই ছিল আমার ডক্টোরাল গবেষণার বিষয়। এই বিষয়বস্তুর মধ্যে আমি প্রবেশ করেছিলাম উল্টো দিক থেকে, অর্থাৎ ঢাকা শহরের “আরবান ফোক” নামক এক ধরনের পপ গানের চলটি আমার নজর কেড়েছিল প্রায় এক যুগ আগে। নগরগরিব তখনো আমার চিন্তার মধ্যে নেহাত একটি উন্নয়নমূলক উপাদান হয়ে ছিল। আমি কাজ করতাম বস্তিবাসীর স্বাস্থ্য, পয়োনিষ্কাশন, কিংবা বস্তি উচ্ছেদ ইত্যাদি নিয়ে। এসব মুহূর্তে যখনি বস্তির কোনো ডেরায় ঢুকেছি উন্নয়নপ্রভুর জরিপ অথবা সাক্ষাৎকারের ছাপানো ফর্দ নিয়ে, অবাক হয়ে দেখেছি এতটুকু ডেরার প্রায় এক তৃতীয়াংশ জুড়ে ক্যাসেট আর ক্যাসেটপ্লেয়ারের মনোরম ডিসপ্লে। আধা মনোযোগে, আধা কৌতুকে তাদের গান শুনেছি বসে বসে: অচেনা শিল্পী, অদ্ভূত গায়কী, বিদঘূটে সব গান! বাংলা গানের যে রুচি আমার তৈরি হয়েছে রবীন্দ্র-নজরুল-হেমাঙ্গ-সলিল-সুমন-অঞ্জনবাহিত বিস্তীর্ণ পলিমাটিতে, এই গান সেখানে খাপছাড়া। এই দাপুটে গানের ধারা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের দাপুটে সংস্কৃতির ভেতর নিশ্চয়ই অনেক প্রতিপত্তি নিয়ে বেঁচে থাকবে, কিন্তু কেউ কি ভেবেছিল যে, গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে প্রকাশ পাওয়া ইমনের এলবামের বিক্রিও লাখ ছাড়াবে, সিলটি শরীফের গানের সিডি বেচবার জন্য দেশের আনাচে কানাচে তার নামে আলাদা দোকান হবে, মমতাজের এলবামের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে, আর এই ‘এগজোটিক’ গানের বাজার বাংলাদেশের গোটা সঙ্গীতবাজারের প্রায় সত্তরভাগ দখল করে নেবে?১ আরবান ফোক গানের এই অগ্রযাত্রা নিয়ে নানান অবকাশে লিখেছি, ফলে বর্তমান পরিসরে সেই আলাপে বিস্তার ঘটাবার সুযোগ কম।২ বরং ঢাকায় নগরগরিবের সাংস্কৃতিক পরিচয় উৎপাদনে এই গান যেভাবে ভূমিকা রাখছে, সে বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ হাজির করাই বর্তমান নিবন্ধের লক্ষ্য।
ম্যাসরিডিং, মিসরিডিং :: জাহেদ আহমদ
মানুষ আপোস করে বাঁচে, কবিতা কিন্তু আপোস চেনে না; — গ্যুন্টার গ্রাস্ বলেছিলেন কথাটা। প্রিন্সটন য়্যুনিভার্সিটিতে একটা ভাষণ দিচ্ছিলেন তিনি, বেশ অনেক-বছর আগে, সেই-সময়ের কথা। আমি অবশ্য ওই ইভেন্টে যেয়ে সরেজমিন প্রেজেন্ট হই নাই, ফিজিক্যালি ম্যুভ করার দরকারও হয় না আদৌ, অন্তত বক্তৃতা শোনাশুনিতে, অ্যাপ্সযুগে তো পড়া-শোনা-জানা ইত্যাদি ক্রিয়াকলাপে ফিজিক্যাল প্রেজেন্সের নেসেসিটি নগণ্যই; কিংবা আস্ত বক্তৃতাটাও শুনি নাই, আমি শুনেছিলাম কখনো কথাচ্ছলে সুমনের মুখে। সেইটাও ওই ইন্টার্ভিয়্যু মারফতে। একটা ইন্টার্ভিয়্যু পড়েছিলাম কবীর সুমনের, ইন্ডিয়ান বাংলা গানের বাগগেয়কার কবীর সুমন, প্রসঙ্গক্রমে সেখানে কোথাও কবীরজি স্পিচটার উল্লেখ করেছিলেন। মোদ্দা কথা, মানুষের বাঁচা আপোসের ভিতর দিয়া হলেও কবিতা অনাপোস। কবিতার বাঁচা আপোস দিয়া হয় না। কবি নিশ্চয় ব্যক্তিজীবনে আপোস করতেই পারেন, কিন্তু কবিতায় সেই আপোসের ছায়াপাত ঘটলেই ঘাপলা। যা-হোক। কবিতা আপোসবিরুদ্ধ বলেই কি কবিতার পাঠক সংখ্যায় চিরকাল অল্প? স্বভাবে আপোসকামী, কিন্তু লোক-দেখানিয়া ডাঁট বজায় রেখে চলতে-চাওয়া মানুষ কবিতার কাছ থেকে তাই কি তিনশ পঁয়ষট্টি কিলোমিটার দূরে থাকতে চায়? কে জানে, হতে পারে, হয়তো-বা।